ICDমূলকথা
মূলকথাঃ (Abstract) :
মানব সভ্যতা আজ বিশ্বায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ।দেশ,জাতি,গোত্র,গোষ্ঠী,ধর্ম,বর্ণ ইত্যাদি সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে বিশ্বের সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসাথে একটা সুখী সমৃদ্ধ পৃথিবী গড়ার অভিপ্রায়ে কাজ করবে এটাই হচ্ছে বিশ্বায়নের তথা Globalization এর মূলমন্ত্র । উন্নত বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও তাদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতির ধ্যান ধারনাকে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে সমন্বয় সাধন ও প্রয়োগের মাধ্যমে অচিরেই আমাদের বাংলাদেশের মত সকল উন্নয়নকামী দেশকে উন্নত দেশে পরিনত করা সম্ভব।এই বিশ্বাস থেকেই বিশ্বায়নের দাবীটি বিশ্বের এক মানচিত্রে থাকা সমগ্র মানব সভ্যতার কাছে বিশ্বে ধীরে ধীরে জোড়ালো হয়ে উঠছে।আর এই ধারনাকে আরো গতিশীল করার জন্যই আমাদের ‘দি গ্লোবাল জব’ এর নিরলস প্রচেষ্টা।
বর্তমান বিশ্বে ব্যপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ দেশে-দেশে, জাতিতে-জাতিতে সশস্ত্র যুদ্ধ বয়কট করতে শিখেছে। দু’ একটি বিছিন্ন ঘটনা ছাড়া সারা বিশ্বে চলছে এখন শান্তি প্রক্রিয়া ।মানুষ এখন যুদ্ধ বিগ্রহ, পারস্পরিক হানাহানি, মারামারি, হিংসা- বিদ্বেষ ভুলে মানুষ খুজছে সুখ ও শান্তির ঠিকানা । সুখী সমৃদ্ধ জীবন যাপনই তাদের মূল লক্ষ্য। যুদ্ধ বিগ্রহ নয়।
তারপরও সমগ্র বিশ্ব জুড়ে দেশে-দেশে, জাতিতে– জাতিতে চলছে এখন এক নীরব যুদ্ধ- যা সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধের চাইতেও ভয়াবহ। এই যুদ্ধ অন্য কিছু নয় – এটা হচ্ছে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ জালিয়াতি চক্রের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক জালিয়াতি চক্রের সাথে প্রযুক্তিগত যুদ্ধ !! (Technological war against national and international counterfeit group & agency.)
প্রযুক্তিগত যুদ্ধটি আসলে কী !!
প্রতিটি দেশের রয়েছে শত্রু ও মিত্র রাষ্ট্র।আবার দেশের অভ্যন্তরে থাকে দেশ বিরোধী শত্রু ও দুর্বৃত্ত চক্র । আন্তর্জাতিক দেশ বিরোধী চক্রের যোগসাজশে শত্রু রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতাসীন সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যহত করতে এরা থাকে সদা তৎপর। পরোক্ষভাবে শত্রু দেশের অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব, শান্তি শৃঙ্খলা ও সুশাসন বিপন্ন করাই এদের মূল উদ্দেশ্য। আর এই কাজটি এই দুষ্টচক্র মূলত করে থাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার কারনে এ যুদ্ধ এখন বিশ্ব জুড়ে ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। জাল জালিয়াতি ও পাইরেসির কারনে গত বছর সমস্ত বিশ্বে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০০বিলিয়ন ডলার। দিনে দিনে এর পরিমান যেমন বাড়ছে ঠিক তেমনি অনেক রাষ্ট্রের রাজস্ব খাতে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে ।বিশ্বজুড়ে চাকুরীর বাজার সংকুচিত হচ্ছে। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে এ অবস্থা আশংকাজনক।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক জালিয়াতি চক্রের প্রধান টার্গেট:
দেশ ও মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টস ও প্রোডাক্টস–কে একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের ভিত্তিভূমি বলা হয়ে থাকে। রাষ্ট্রীয় ভাবে উৎপাদিত এবং দেশের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা এর সঙ্গে জড়িত বলে এসবকে National security documents and products বা জাতীয় নিরাপত্তামূলক দলিল-দস্তাবেজ এবং পণ্য বলা হয়ে থাকে। দেশী– বিদেশি, আন্তর্জাতিক জাল-জালিয়াতি চক্র এবং অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর প্রধান টার্গেট হচ্ছে একটি দেশের এসব নিরাপত্তামূলক জাতীয় ডকুমেন্টস ও পণ্য সমুহ । আর কোন দেশের এসব নিরাপত্তামূলক ডকুমেন্টস যদি হয় নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যহীন বা দুর্বল নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত তাহলে জালিয়াতি চক্রের পক্ষে এসবের জাল জালিয়াতি করা অতি সহজ হয়।ঐসব দেশকেই মূলত তারা টার্গেট করে থাকে ।যার ফলে ঐ সমস্ত দেশ সমূহ চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশে আভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে এবং দেশে দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যায়।
তাই উন্নত দেশ এসব পাবলিক বৈধ ডকুমেন্টস–কে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দিয়ে তৈরি করে থাকে এবং এসব স্পর্শকাতর বৈধ কাগজপত্রকে জালিয়াতির হাত থেকে সুরক্ষিত করে থাকে। কিন্তু যে সব দেশ এটি করতে ব্যর্থ হয় তারা চরম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে পরিনত হয়।উন্নায়ন বাঁধা গ্রস্থ হয়ে দেশে সুশাসনের অভাব দেখা দেয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় দুর্বল নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশের ব্যাংক নোটের জাল জালিয়াতি প্রকট আকার ধারন করেছে। দৈনিক নিউ নেশন সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সুত্র অনুযায়ী বাংলাদেশ জাল টাকা বিস্তৃতির কারণে এখন বিশ্বে এক নম্বর দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আবার জাল শিক্ষা সনদের ছড়াছড়ির কারণে সরকারি–বেসরকারি পর্যায় থেকে আরম্ভ করে নিয়োগ বাণিজ্যে আজ শিক্ষকের মত মহান পেশাও আজ জড়িত।ফলশ্রুতিতে সমাজে দুর্নীতির মাত্রা কাংখিত মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভবপর হচ্ছে না ।(Add video clip on Jal taka and jal education certificate/GPA-5 etc)
দুর্নীতি ও অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক জালিয়াতি চক্র মোকাবেলায় উন্নত রাষ্ট্রের ভুমিকাঃ
নিরাপত্তামূলক রাষ্ট্রীয় তথা পাবলিক ডকুমেন্টস ও পণ্য জাল জালিয়াতির মাধ্যমে একটি দেশের বাজারে ছেড়ে দিলে সে দেশ কখনো তার কাংখিত লক্ষে পৌঁছেতে পারে না। উপরন্তু দুর্নীতি ব্যপক আকার ধারন করে সমাজে সুশাসন ও সার্বিক উন্নায়ন বাধাগ্রস্থ হয়। তাই উন্নত রাষ্ট্রগুলো এসবের জাল জালিয়াতি রক্ষার্থে তথা প্রতিরোধ কল্পে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এসব দেশ যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
১। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দেয়া হয় যা জালিয়াতি চক্রের পক্ষে জাল করা প্রায় অসম্ভব ও দুঃসাধ্য । যেমন সুইজারল্যান্ডের মত অতি উন্নত দেশের ব্যাংক নোটে কমপক্ষে ১৮ টি দৃশ্যমান ও গোপনীয়, লুক্কায়িত অ-দৃশ্যমান নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য (Covert & Overt security features) দেয়া থাকে-যা নকল বা জাল করা অসম্ভব । এজন্য সুইস ফ্রাংককে সবচেয়ে শক্তিশালী টাকা বা ব্যাংক নোট বলা হয়ে থাকে। (Add Video Swiss franc)
২। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত –কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এ খাতে কোন ধরনের জালিয়াতি করতে না পারে সে জন্য এ খাতের সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টস-কে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত দৃশ্যমান ও গোপনীয়, লুক্কায়িত অদৃশ্যমান নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য (Covert & Overt security features) দেয়া হয় । শিক্ষা সনদে এমন নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দেয়া হয় যার ফলে সনদ জাল করা সম্ভব হয় না।
৩। রাজস্ব খাতের ডকুমেন্টস ও পণ্য সমুহকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দিয়ে বাজারে ছাড়া হয়।
৪। সকল ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ীর ফিটনেস সনদ ,গাড়ীর রেজিঃ সার্টিফিকেট , রুট পারমিট ইত্যাদিতে সর্বাধুনিক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দেয়া হয়।
৫।ন্যাশানাল আই ডি সহ যাবতীয় আই ডি কার্ড এমন নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দেয়া হয় যা নকল বা জাল কার জালিয়াতি চক্রের জন্য দুঃসাধ্য ।
৬। দেশ ও মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় ডকুমেন্টসকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয় এবং এসবের মধ্যে প্রদত্ত যাবতীয় দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য (Covert and Overt security features)সর্ব সাধারণ জনগনের অবগতি ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন গনমাধ্যম , রেডিও , টেলিভিশন, অন লাইন , ওয়েব সাইটে ফলাও করে প্রচার করা হয় ।
৭। পরিশেষে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো, কোন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে জাল জালিয়াতি শনাক্ত করে আসল নকল বুঝতে পারবে তাও উল্লেখ করে দেয়া হয়। এর ফলে সেসব দেশে দুর্নীতি ব্যপক হারে কমে গিয়ে দেশ আরও উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে । দেশের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনিকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ডিভাইস দেয়ার ফলে তারা মাঠ পর্যায়ে জাল জালিয়াতি শনাক্ত করে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করে থাকে।
শুধু উন্নত দেশই নয়, আমাদের পার্শ্ববর্তী উন্নয়নশীল দেশ ইন্ডিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান সহ এশিয়ার অন্যতম দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং সহ অনেক দেশেও এভাবে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে গনসচেতনতা বৃদ্ধি করে দেশ থেকে জাল জালিয়াতি বন্ধ করে দুর্নীতি ব্যপক হারে কমিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছে ।বলা বাহুল্য ভুটান অবিশ্বাস্য ভাবে দুর্নীতি কমিয়ে এনে বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। ( ২০১৭ তে মাত্র ২৬ তম)এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা বাংলাদেশ কেন পারছি না ?
প্রেক্ষাপট বাংলাদেশঃ
এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জনক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রি শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও দুর্নীতি আশানুরূপ হারে কমেনি। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিগত বি এন পি সরকারের আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে শীর্ষস্থান বা ১ম স্থান পদটি ধরে রেখেছিল। অতঃপর বর্তমান সরকার আমলে (২০০৯-২০১৭) হাটি হাটি পা পা করতে করতে এখন ১ম স্থান থেকে ১৭ তম স্থানে পৌঁছেছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশানাল এর ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের ১৭৫ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪৩তম, নেপাল ১২২তম, শিলংকা ৯১তম, ইন্ডিয়া ৮১তম এবং বিস্ময়কর ভাবে ভূটান মাত্র ২৬তম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ সার্ক ভুক্ত দেশের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে বেশে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এবং ভূটান সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশে হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় আফ্রিকা মহাদেশের ইথুওপিয়ার মত দেশেও আমাদের চাইতে কম দুর্নীতিগ্রস্থ। তাদের স্থান ১৭৫ টি দেশের মধ্যে ১০৭তম।